B.Ed Course in Bangladesh



শিক্ষা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির নামই বিএড(ব্যাচেলর অব এডুকেশন) ও এমএড (মাষ্টার অব এডুকেশন)। শিক্ষকতায় যারা আসতে চান এবং শিক্ষকতা পেশায় যারা কর্মরত তাদের জন্যই এসব কোর্স। এসব কোর্সে হাতে কলমে অনেক কিছু শেখানো হয় যা অনেক কাজে লাগে।দেশের সব সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (মাধ্যমিক স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত) উভয় ডিগ্রিধারী শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণীর স্কেলে বেতন প্রদান করা হয়।
ভর্তির যোগ্যতা
বিএড এমএড কোর্সের ভর্তির যোগ্যতা মেয়াদ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন। যেমন ৪ বছর মেয়াদি বিএড অনার্স কোর্সের জন্য প্রার্থিকে উচ্চমাধ্যমিক বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম ২য় বিভাগ বা জিপিএ-২ পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে।আর টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলর ১ বছর মেয়াদি বিএড কোর্সে ভর্তির যোগ্যতা দ্বিতীয় বিভাগে স্নাতক।
যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়য়ের স্নাতক ডিগ্রী থাকলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১বছর মেয়াদি সান্ধ্য এমএড কোর্স করা যায়।
শিক্ষক ক্যাটাগরিতে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকরা বিএড কোর্স করতে পারেন। এ ছাড়া যারা শিক্ষকতা করেন না তারা টিচার্স ট্রেনিং কলেজগুলোতে অশিক্ষক ক্যাটাগরিতে আবেদন করতে পারবেন।উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পাস করা শিক্ষার্থীরাও শর্তপূরন সাপেক্ষে ভর্তির সুযোগ পেতে পারেন।বিএড পাস করার পরই কেবল কোনো শিক্ষার্থী এমএড কোর্সের জন্য আবেদন করতে পারবে।
ভর্তি পরীক্ষা
বিএড, বিএড অনার্স ও এমএড কোর্সে ভর্তির জন্য পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। ১বছর মেয়াদি বিএড কোর্সে ভর্তির জন্য ১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয়। বাংলা, ইংরেজি, গনিত ও সাধারনজ্ঞান বিষয়ে প্রশ্ন থাকে।
এ ছাড়া বিভাগ সংশ্লিষ্ট বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের ৪বছর মেয়াদি অনার্স কোর্সে এমসিকিউ পদ্ধতিতে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। ধানমণ্ডির টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ৪বছর মেয়াদি বিএড অনার্স কোর্সে ১০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা হয়ে থাকে।এতে বাংলায় ২৫, ইংরেজীতে ২৫ ও সাধারনজ্ঞান বিষয়ে ৫০টি নৈর্ব্যত্তিক, অর্থাৎ সর্বমোট ১০০টি নৈর্ব্যত্তিক প্রশ্ন করা হয়। এমএডের ক্ষেত্রেও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এতেও পরীক্ষার ধরন প্রায় একই।
যা পড়ানো হয়
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত দেশের সব সরকারি-বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে সাধারণত যেসব বিষয় পড়ানো হয় তা হচ্ছে শিক্ষণ দক্ষতা, মাধ্যমিক শিক্ষা, শিক্ষাক্রম ও শিশুর ক্রমবিকাশ, শিখন, মূল্য যাচাই ও প্রতিফলনমূলক অনুশীলন, মৌলিক কম্পিউটার দক্ষতা এবং কর্মসহায়ক গবেষণা ইত্যাদি। এ ছাড়া বাংলা, ব্যবসায় শিক্ষা, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান এবং সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্ম শিক্ষা, কৃষি শিক্ষা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি ও তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তিসহ অন্যান্য বিষয়ও পড়ানো হয়।
খরচাপাতি
এক বছর মেয়াদি বিএড কোর্সে ভর্তি ফি সাধারণত চার হাজার থেকে শুরু করে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে এককালীন চার হাজার ২৭৫ টাকা পরিশোধ করতে হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের তুলনায় বেশি।
যাঁরা চার বছর মেয়াদি বিএড সম্মান কোর্স সম্পন্ন করতে চান, তাঁদের প্রথম বছর এক হাজার ৮৭৮ টাকায় ভর্তি হতে হয়। এ ছাড়া প্রতিবছর এক হাজার ১২০ টাকা সেশন ফি দিতে হয়।
এমএড কোর্সে ভর্তি হতে হলে এককালীন তিন হাজার ৬৯৫ টাকা পরিশোধ করতে হয়। এ ক্ষেত্রেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কোর্সের খরচ সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশি। যাঁরা বিএড কোর্স করবেন, তাঁদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করে থাকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। কোর্স শেষে মাসে ৩০০ টাকা হারে এক বছর এই শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হয়।
কোথায় পড়বেন
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে বিএড অনার্স ও মাস্টার্স পড়ার সুযোগ। তবে পিএইচডি ও এমফিল করার সুযোগ রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর)। ১৯৬০ সালে ২ বছরের এমএড কোর্সের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু। ২ বছরের এ কোর্সকে প্রথম বছর Dip in Educatin ও দ্বিতীয় বছর Master in Education নামে ডাকা হত। যা পরবর্তীতে ১৯৯৪-৯৫ শিক্ষাবর্ষে  Dip in Educatin কে Bachelor of Education (Honours) এ উন্নিত করা হয়। দিন দিন এর চাহিদা বাড়তে থাকার কারণে ১৯৯৮-৯৯ শিক্ষা বর্ষে তিন বছরের অনার্সকে চার বছরে উন্নিত করা হয়। অনার্সে আসন মাত্র ১৬০টি। ৪টি বিষয়ে অনার্সের শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হয়।
অনার্স কার্যক্রমের বাইরে আইইআর-এ অন্য যেসব কার্যক্রম রয়েছে তার মধ্যে রয়েছে এক বছর মেয়াদি Master in Education , এক/দুই বছর মেয়াদি সান্ধকালীন Master in Education , দুই বছর মেয়াদি PHD ও M. Phil যা ১০ টি বিষয়ের মধ্যে নির্দিষ্ট। যারা সান্ধকালীন Master in Education কোর্সে ভর্তি হতে ইচ্ছুক তাদের অবশ্ই বি. এড ডিগ্রী থাকতে হবে। PHD ও M. Phil এর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের মত একই নিয়ম মেনে চলে।
Master in Education কোর্সে ১২টি কোর্স পড়ানো হয়। যা শিক্ষার্থী ইচ্ছা করলে এক/দুই বছরে পড়তে পারবে। এক্ষেত্রে বছরে তিনটি পর্ব রয়েছে। যারা এক বছরে ১২ টি কোর্স পড়তে ইচ্ছুক তাদের প্রতি পর্বে ৪ টি করে কোর্স পড়তে হবে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধীনে চার বছর মেয়াদি অনার্স ও এক বছর মেয়াদি সান্ধ্য এমএড কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনেক সরকারি ও বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলোতে বিএড কোর্স করা যায়। সব টিচার্স ট্রেনিং কলেজে বিএড থাকলেও এমএড কোর্স চালু নেই। ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ কয়েকটি টিচার্স ট্রেনিং কলেজে এমএড করা যায়। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএড অনার্স কোর্স করা যায় শুধু ধানমণ্ডির টিচার্স ট্রেনিং কলেজে। এছাড়াও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে, কিন্তু সবগুলো মানসম্মত নয়। তাই ভর্তির আগেই প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিতে হবে।
চাকুরির ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা:
বর্তমানে ব্যাচেলর-অব-এডুকেশন বা বিএড ও মাস্টার্স অব এডুকেশন সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের চাকুরির ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীরা বিসিএস, বিসিএস (শিক্ষা), শিক্ষা মন্ত্রনালয়, শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, নায়েম, শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ সহ অন্যান্য সরকারী চাকুরি। বর্তমানে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করার অন্যতম যোগ্যতা চাওয়া হয় বিএড ও এমএড কোর্স সম্পন্ন শিক্ষক। সে ক্ষেত্রে এ কোর্স সহায়কের ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেও কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও তাদের শিক্ষামূলক প্রকল্প পরিচালনার ক্ষেত্রে বিএড ও এমএড কোর্স সম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি চায়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-Save the Children, US- Aid, AUS-Aid, UNESCO,UNECEF, CAMPE, ব্রাক, প্রশিকা, আহসানিয়া মিশন ইত্যাদি।   বর্তমানে প্রায় সবকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা বিষায়ক প্রধান হিসেবে কাজ করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা। যারা বিএড ও এমএড কোর্স সম্পন্ন। মূলকথা বিএড ও এমএড কোর্স করা শিক্ষার্থীরা দক্ষতার সাথে কাজ করার কারণে দিন দিন শিক্ষা ক্ষেত্রে এসব শিক্ষার্থীদের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
উচ্চ শিক্ষার সুযোগ-সুবিধা:
শিক্ষা ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বে উচ্চ শিক্ষার সুবিধা অনেক বেশি। প্রত্যেক বছর শিক্ষার্থীদের বিরাট একটা অংশ বৃত্তি নিয়ে উন্নত দেশে পড়াশুনা করতে যায়। এ ক্ষেত্রে অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জাপান, নিউজিল্যান্ড, ফিলিপাইন ও ভারতের নাম উল্লেখ যোগ্য। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শিক্ষা বিজ্ঞান বিষয়ক বিভাগ, অনুষদ, ইনস্টিটিউট এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। সেখানে বৃত্তি নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। মূলত বৃত্তির বিষয়টা শিক্ষার্থীর চেষ্টার উপর নির্ভর করে।
উন্নত দেশে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষায় বৃত্তি দিয়ে থাকে এ গুলোর মাঝে রয়েছে- মোনাস ইউনিভার্সিটি; অস্ট্রেলিয়া, নরোজিয়ান ইউনিভার্সিটি অব লাইফ সাইন্স; নরওয়ে, জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি; যুক্তরাষ্ট্র, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি; কানাডা, কলোম্বিয়া ইউনিভার্সিটি; যুক্তরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দেশের নামি দামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তির সুযোগ রয়েছে।
কিছু প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা
* শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। ফোন: ৯৬৬১৯০০ বর্ধিত     ৮২০০, ৮২০১
* টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, মিরপুর রোড, ধানমণ্ডি, ঢাকা। ফোন: ৮৬১৩৪৬৭
* ঢাকা মেট্রোপলিটন টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ২২ ইন্দিরা রোড, ফার্মগেট, ঢাকা।
ফোন: ৮১২৫২৩৯
* খানবাহাদুর আহসানউল্লাহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, শ্যামলী, ঢাকা। ফোন: ৮১১৯৫২১
* মহানগর শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ, ১৮৬ আজিমপুর, ঢাকা। ফোন: ৮৬২৭৭৭৮

No comments

Theme images by Deejpilot. Powered by Blogger.